কালের কন্ঠের আয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলী সংবর্ধিত

ষ্টাফ রিপোর্টারঃ একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলী। তিনি গাবতলী থানার বালাইহাটা গ্রামের কৃষক মোকবুল হোসেন-রসিদা খাতুন দম্পতির সন্তান। চার ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। একাত্তরে তিনি গ্রামের স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়তেন। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া তার দলের ৩২ জনের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ সদস্য। ছোট বলে প্রথমে তার দলের সদস্যরা তাকে সঙ্গে নিতে চায়নি। এ অবস্থায় বন্ধু সোলেমানকে নিয়ে সোনাতলার চরপাড়ায় গিয়ে গোফফার ডাক্তারের মাধ্যমে তিনি যুদ্ধে যাবার অনুপ্রেরনা পান। এক রাতে মাকে কিছু না জানিয়েই ঘর ছাড়েন তিনি। সম্বল বলতে ছিলো পকেটে ১০ টাকা আর একটি ক্যামি ঘড়ি। বন্ধুর পথ পার হয়ে ট্রেনিং শেষে ভারতের কামারপাড়া বালুঘাট হয়ে আব্দুল আজিজ ও রঞ্জু গ্রæপের সঙ্গে দেশে ফেরেন তারা ৩০ জন। নৌকায় অস্ত্র নিয়ে সারিয়াকান্দিতে ঢুকে পড়েন। তার কাছে ছিল থ্রি নট থ্রি রাইফেল। আর সারিয়াকান্দি কলেজ মাঠের ওই আক্রমণ ছিল আমার তার সম্মুখযুদ্ধ। টার্গেট বগুড়ার সারিয়াকান্দি কলেজ মাঠে অবস্থান নেওয়া দুই শতাধিক পাকিস্তানি সেনা। তবে সাহস আর ক্ষিপ্রতা বিবেচনায় প্রথম গুলি ছোড়ার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। সেখানেই প্রথম সফলতা তার। মুক্তিযোদ্ধা মহসিনের প্লাটুন কমান্ডার ছিলেন আব্দুল আজিজ রঞ্জু। এ প্লাটুনের সদস্য হয়ে তিনি মিত্রবাহিনীর ট্যাংক ইউনিটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বগুড়ার মাদলা গ্রামে এবং বগুড়া শহরকে শত্রæমুক্ত করতে হামলা চালান। টানা যুদ্ধের পর তারা শক্রমুক্ত করে ফেলেন প্রাণের জেলা বগুড়াকে। দেশমাতৃকাকে হানাদারমুক্ত করে নিজ গ্রামে ফিরেছেন বিজয়ীর বেশে। তিনি বলেন, গ্রামে একটি মাত্র রেডিও ছিল আজিজ মন্ডলের। একদিন গ্রামের মাঠে দেখলাম বন্ধুরা রেডিও শোনার জন্য জড়ো হয়েছে। আমিও শুনলাম বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ভাষণ। মনের মধ্যে উত্তেজনার ঝড় বয়ে যায়। ২৬শে মার্চ বঙ্গবন্ধুর আহŸান শুনে যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
একাত্তরের রণাঙ্গনের এই বীর মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলীকে শুক্রবার কালের কন্ঠের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে জেলা পরিষদ মিলনায়তনে সংবর্ধনা দেয়া হয়। কালের কন্ঠর পক্ষ থেকে এই বীর যোদ্ধাকে মুত্তিযুদ্ধে প্রতিকৃতির ক্রেষ্ট, উত্তরীয় এবং আর্থিক সন্মাননা উপহার দেয়া হয়। তার হাতে এসব উপহার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্যানেল চেয়ারম্যান আসাদুর রহমান দুলু, ডা: শফিক আমিন কাজল, মমিনুর রশিদ শাহিন, ডা: সিরাজুল ইসলাম ফাইন। সংবর্ধিত মুক্তিযোদ্ধা মহসিন আলীর প্রতি কালের কন্ঠের এই সন্মানায় তিনি আবেক আপ্লুত হয়ে পড়েন। বক্তব্য কালে বলেন, আমরা এখন যে সন্মান পাচ্ছি তাতে মনে হচ্ছে সেদিন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে ভুল করিনি। এই প্রজন্ম আমাদের ঠিকই মূল্যায়ন করছে। তিনি বলেন বঙ্গবন্ধুর ভাষন শুনে অনুপ্রানিত হয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এখন আমরা স্বাধীন। এ কারনে হিংসা, হানাহানি মুক্ত সুন্দর একটি বাংলাদেশ চাই। তিনি এই সন্মাননার জন্য বসুন্ধরা গ্রæপের চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ