বাগাতিপাড়ায় অরক্ষিত ৫ লেভেলক্রসিং একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা

বাগাতিপাড়া (নাটোর) প্রতিনিধি: নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ৫ লেভেলক্রসিং অরক্ষিত রয়েছে। এতে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। গতকাল সোমবার এক ট্রেনের ধাক্কায় এক মহিলা ও গত ১১ জুন দম্পতি নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসী।

জানা গেছে, উপজেলার আব্দুলপুর-পার্বতীপুর ও আব্দুলপুর-রাজশাহী দুই রুটে রেললাইনের ১০ লেভেলক্রসিংয়ের পাঁচটিই অরক্ষিত রয়েছে। এসব ক্রসিংয়ে গেটম্যান নেই। নেই কোনো নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা। উন্মুক্ত রেলগেট দিয়ে যানবাহন ও সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ফলে এসব লেভেলক্রসিংয়ে প্রতিনিয়তই বাড়ছে দুর্ঘটনা।

এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। রেলের কর্মকর্তারা বলেছেন, সরকারিভাবে অনুমোদিত না হওয়ায় এ পাঁচটি ক্রসিংয়ে গেটম্যান নিয়োগ করা যাচ্ছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পাঁকা ইউনিয়নের লোকমানপুর রেলস্টেশন ও তার পাশে বাজার বেশ পুরোনো। বিশাল একটা এলাকার লোকজনের উপজেলা সদরে যাতায়াতে এই রেলক্রসিং ব্যবহার হয়।

তারপরও এই রেলক্রসিং পার হয়ে একাধিক স্কুল, কলেজে, প্রতিদিনই অসংখ্য ছাত্রছাত্রীরা এই সকল পথ ধরেই যাতায়াত করে। উপজেলার সীমানার মধ্যে মালঞ্চি ও লোকমানপুর দুটি রেলস্টেশন রয়েছে। এর মধ্যে আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী অভিমুখে লোকমানপুর রেলস্টেশনের দুই পাশে পাঁচটি লেভেল ক্রসিংয়ের সবই অরক্ষিত। এগুলো হলো মাড়িয়া নিংটিপাড়া, হাড়ভাঙ্গী, মালিগাছা, গাঁওপাড়া ও ঝিনা ক্রসিং।

চিথলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন বলেন, তার বয়স প্রায় ৫০ বছর। তার জন্মের পর থেকেই তিনি এই বাজার ও রেলস্টেশন দেখছেন। কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি থাকলে এখানে অনেক আগেই গেটম্যানের ব্যবস্থা হত।

রেলগেট সংলগ্ন স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ছয় বছর আগে ইয়াছিনপুর রেলগেট পারাপারের সময় ট্রেনের ধাক্কায় নববধূসহ চারজন ভটভটি যাত্রী নিহতের ঘটনা ঘটে। আব্দুলপুর থেকে রাজশাহী অভিমুখে উপজেলার পাঁচটি লেভেলক্রসিংয়ের সবই উন্মুক্ত থাকায় প্রায়ই সেখানে দুর্ঘটনা ঘটছে। দুই বছর আগে মাড়িয়া নেংটিপাড়া রেলগেটে চিথলিয়া গ্রামের ফজিলা নামে এক গৃহিণী কাটা পড়েন।

একই বছর ১৩ জুলাই অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি একই ক্রসিংয়ে কাটা পড়ার ঘটনা ঘটে। এর দুদিনের মাথায় আইয়ুব আলী নামে আরও একজন ট্রেনে কাটা পড়েন। স্থানীয় লেভেলক্রসিং সংলগ্ন চায়ের দোকান মালিক ভোলা আলী জানান, তিনি সেখানে প্রায় ২৫ বছর যাবত দোকান কাজ পরিচালনা করে আসছেন। বর্তমানে তার নামের কারণে এই লেভেলক্রসিং ভোলার মোড় নামেও পরিচিত।

অরক্ষিত হওয়ায় হাড়ডাঙ্গী বা ভোলার গেট লেভেলক্রসিংয়ে প্রায় প্রতি বছরই ৪ থেকে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। সর্বশেষে গত ১১ জুন দুপুরে মোটরসাইকেলযোগে পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মফিজুল ও সাবিনা নামের স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে প্রাণ হারান এবং গত সোমবার দুপুরে স্বামীর বাড়ি থেকে বাবার বাড়ি যাওয়া পথে মাড়িয়া নিংটিপাড়া লেভেলক্রসিংয়ে পার হওয়ার সময় ট্রেনের ধাক্কায় অঙ্গুরা খাতুন প্রাণ হারান।

রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার বলেন, এই ক্রসিংগুলো সরকার অনুমোদিত নয়। সেগুলো নিয়ম মেনে করা হয়নি। সড়ক বিভাগ ইচ্ছেমতো এসব ক্রসিং বানিয়েছে। এমনিতেই রেলের জনবল কম, তারপরও রেল বিভাগের তালিকায় না থাকায় জনবল নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলামের সঙ্গে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১