যে ৩ কারণে ‘প্রবল’ ঝুঁকিতে ডলার

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রিজার্ভ মুদ্রা হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের ডলার। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে উদ্ভূত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটে ইউএস কারেন্সির আধিপত্য ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে। বাণিজ্যভিত্তিক প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক রিজার্ভের প্রায় ৬০ শতাংশই ডলার-নিয়ন্ত্রিত সম্পদ। বৈশ্বিক ঋণদাতা গোষ্ঠী আইএমএফ এ উপাত্ত দিয়েছে। বিশ্ব বাণিজ্যে বহুল ব্যবহৃত মুদ্রাও এটি।

গত বছরের ফেব্রয়ারিতে ইউক্রেনে হামলা শুরু করে রাশিয়া। সেই জেরে রুশ সম্পদে অসংখ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে পশ্চিমা মহল। এতে আঁতকে গেছে অন্যান্য দেশগুলোও। তারা মনে করছে, কোনো সমস্যা দেখা দিলে তাদের সম্পদও জব্দ করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে বিকল্প মুদ্রার চিন্তাভাবনা করছে সেসব দেশ। সেই তালিকায় রয়েছে ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, বাংলাদেশ ও ভারত। বৈশ্বিক লেনদেনে চীনের মুদ্রা ইউয়ান ও বিটকয়েনকে ডলারের ব্যাকআপ হিসেবে রাখতে চাচ্ছে তারা। মূলত, সামষ্টিক-ভূরাজনৈতিক পরিবেশ দেশগুলোকে বিকল্প মুদ্রা খুঁজতে উদ্বুদ্ধ করছে। বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থায়নে ডলারের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অস্বস্তি রয়েছে। সেই ’৭০ এর দশক থেকে ডি-ডলারাইজেশন আলোচনা চলছে। কয়েক বছর পর পর তা ব্যাপক মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এছাড়া আরও ৩ কারণে ডলার-প্রধান বিশ্ব থেকে দূরে সরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে দেশগুলো। ১. বাকি বিশ্বের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে মার্কিন মুদ্রানীতি

বিশ্বের রিজার্ভ মুদ্রা ইস্যুকারী দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ও অর্থপ্রদান ব্যবস্থায় প্রভাবশালী কারেন্সি হচ্ছে ডলার। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ব্যাপক প্রভাব রাখে এটি। প্রায়শই একে অতিমূল্যায়িত করা হয়।
এতে বিশেষাধিকার পায় যুক্তরাষ্ট্র। ’৮০ এর দশকে একে ‘অতিরিক্ত বিশেষাধিকার’ বলে অভিহিত করেছিলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ভ্যালেরি গিসকার্ড ডি’ইস্টাইং। যার একটি দিক হলো ডলারের মূল্য দ্রুত হ্রাস পেলে এবং ঋণ পরিশোধ করতে অক্ষম হলে সংকটে পড়ে না যুক্তরাষ্ট্র। কারণ, মুদ্রাটির আরও ছাপিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে ওয়াশিংটন। তাতে মার্কিন অর্থনীতিতে নেতিবাচক কোনো প্রভাব পড়ে না। ফলে তাদের চেয়ে আর্থিক দিক দিয়ে পিছিয়ে যায় অন্যান্য দেশ। এ বৈষম্য কাটাতে নিজস্ব মুদ্রা রুপিতে ব্যবসা করার চিন্তাভাবনা করছে ভারত। ইতোমধ্যে সেই পথে হেঁটেছে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীন। ব্রাজিলও তাতে সায় দিয়েছে। ২. শক্তিশালী ডলার উদীয়মান অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে উঠছে

অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে গ্রিনব্যাকের দাম ব্যাপক বাড়ছে। এতে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জন্য পণ্য আমদানি ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে আর্জেন্টিনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। ফলে পণ্য আমদানি করতে গিয়ে ডলার রিজার্ভ তলানিতে ঠেকেছে। এ প্রেক্ষাপটে আর্জেন্টাইন মুদ্রা পেসো চাপে পড়ে এবং ব্যাপক অবমূল্যায়ন ঘটে। ফলস্বরূপ, মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এ অবস্থায় ডলারের পরিবর্তে বাণিজ্যিক লেনদেনে ইউয়ান ব্যবহার শুরু করেছে আর্জেন্টিনা। গত ২৯ জুন লেখা এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক আর্থিক-পরিষেবা সংস্থা অ্যালিয়ানজের অর্থনীতিবিদরা বলেন, ডলার শক্তিশালী হলে রিজার্ভ কারেন্সি হিসেবে মুদ্রাটির ভূমিকা দুর্বল হবে। এ নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ব্রাজিল প্রেসিডেন্ট লুইস ইনাসিও লুলা দা সিলভা। ডলারবিরোধী মুদ্রার পক্ষে তিনি। ব্রিকসও এতে সমর্থন দিয়েছে। ফলে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা বিকল্প আনার পরিকল্পনা আঁটছে। ৩. বৈশ্বিক বাণিজ্য ও তেলের চাহিদা বৈচিত্র্যময় হচ্ছে, ঝুঁকিতে পড়েছে পেট্রোডলার ডলার বিশ্বের রিজার্ভ কারেন্সি হওয়ার অন্যতম কারণ মধ্যপ্রাচ্যের উপসাগরীয় দেশগুলো তেল বাণিজ্যে গ্রিনব্যাক ব্যবহার করে। কারণ, মার্কিন মুদ্রা ব্যাপকভাবে বাণিজ্য কারেন্সি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ১৯৪৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ডলারে তেল বিক্রি শুরু করে সৌদি আরব। সেই থেকে এ প্রথা চলে আসছে। এতে জ্বালানি স্বনির্ভর হয়ে ওঠে যুক্তরাষ্ট্র। আর ডলারের পরিমাণ বেড়ে যায় সৌদির। ফলে দুই দেশের সঙ্গে অন্যান্য দেশের অর্থনৈতিক তারতাম্য ঘটে। বিংশ শতক পর্যন্ত দারুণ বন্ধুত্ব দেখা যায় সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাতে ফাটল ধরেছে। মার্কিনিদের কাছে আরও তেল নাও বিক্রি করতে পারে সৌদি। বিকল্প হিসেবে চীন ও ভারতে ঝুঁকছে তারা। তাদের পথ ধরে উপসাগরীয় অন্যান্য দেশও এদিকে টলতে পারে। ফলে ঝুঁকিতে পড়েছে ডলার।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
৩১