পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস, ভূমিধসে প্রাণহানির শঙ্কা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ পার্ব্যত্য অঞ্চলে গত কয়েক দিন ধরে টানা মাঝারি মাত্রায় বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ফলে পাহাড়ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। বান্দরবানের বিভিন্ন স্থানে ইতোমধ্যে পাহাড়ধসের ঘটনা ঘটেছে।

এ ঘটনার পর চট্টগ্রামে নগরে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরত ২৫০ পরিবারকে আশ্রয়কেন্দ্রে স্থানান্তর করেছে জেলা প্রশাসন। শনিবার (৫ আগস্ট) রাতে জেলা প্রশাসক আবুল বাশার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান নিজে এ অভিযান পরিচালনা করেন।

জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন,কয়েকদিন ধরে চট্টগ্রামে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে পাহাড় ধসের শঙ্কা তৈরি হয়েছে। এতে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে মহানগরকে ৬ টি সার্কেলে ভাগ করে জেলা প্রশাসনের টিম কাজ করছে।

প্রতিদিন মাইকিং থেকে শুরু করে মানুষকে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান থেকে সরে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

অপরদিকে বান্দরবান, রাঙামাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে মাঠে নেমেছে প্রশাসন।

টানা বর্ষণের কারণে প্রাণহানি রোধে সচেতনতায় মাইকিং করা হচ্ছে। প্রস্তুত করা হয়েছে দু’শতাধিক আশ্রয় কেন্দ্র। তবে আশ্রয় কেন্দ্রে যেতে চাচ্ছেন না পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে বসবাসকারী বাসিন্দারা।

বুধবার থেকে রাঙামাটিতে থেমে থেমে চলছে মাঝারি বর্ষণ। ফলে বাড়ছে ভূমিধসের শঙ্কা। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের আশ্রয় কেন্দ্রে নিতে স্বেচ্ছাসেবক, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দফায় দফায় করা হচ্ছে মাইকিং।

রাঙামাটি শহরের ১৯টি আশ্রয় কেন্দ্র ফাঁকা পড়ে আছে। আর বান্দরবানে সাতটি উপজেলায় ১৯২টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

রাঙামাটি ও বান্দরবান জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ের পাদদেশে বহু মৃত্যুর ঘটনার পরেও সেখানে বসবাস করছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। মৃতুঝুঁকি জেনেও ঘর ছাড়তে রাজি নন তারা।

রাঙামাটি ফায়ার সার্ভিসের ওয়্যার হাউজ ইন্সপেক্টর বিল্লাল হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে টানা মাঝারি ও হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে রূপনগর, শিমুলতলীসহ বেশ কিছু এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে স্থানীয়দের সচেতন করা হয়েছে। তবে মানুষের মধ্যে কোনও সাড়া নেই।

এদিকে অবিরাম বর্ষণে বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে ফের পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে পাহাড় ধস এবং জলাবদ্ধতায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।

প্রশাসন ও মৃত্তিকা পানি সংরক্ষণ কেন্দ্র জানায়, বৃহস্পতিবার থেকে বান্দরবান জেলার সাতটি উপজেলায় অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার সকাল নয়টা পর্যন্ত ১৭২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

এদিকে বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়েছে বান্দরবান-কেরানীহাট চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বান্দরবান-রাঙামাটি সড়ক, লামা-সূয়ালক সড়ক, রোয়াংছড়ি-রুমা অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও জেলা সদরের লেমুঝিরি এলাকা, কালাঘাটা, বনরুপা পাড়া, ইসলামপুর, বালাঘাটা, হাফেজঘোনা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।

বান্দরবান পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সৌরভ দাশ শেখর জানান, বান্দরবান-কেরানীহাট মহাসড়কসহ পৌর এলাকার বিভিন্ন পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে পাহাড় ধসে পড়া মাটি দ্রুত সড়ক থেকে সরিয়ে নিচ্ছে পৌরসভার কর্মচারীরা।

জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, কয়েকদিনের বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা বেড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলায় ১৯২টি আশ্রয় কেন্দ্রগুলো খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণ মজুত রয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।

অপরদিকে, অতি ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধস হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানান, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় রোববার (৬ আগস্ট) সকালের মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। এর ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় কোথাও কোথাও ভূমিধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ