হার দিয়ে এশিয়া কাপ শুরু করলো বাংলাদেশ

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ মাঠে নামার আগে থেকেই বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ ছিল ওপেনিং। সেই শঙ্কায় যেন সত্যি হয়েছে। ব্যর্থ হয়েছেন তানজিদ তামিম, পারেননি নাঈম শেখও। বাজে শুরুর পর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে লড়েছেন কেবল নাজমুল হোসেন শান্ত। তার ৮৯ রানে ইনিংসে কোনোরকমে দেড়শো পেরোয়া বাংলাদেশ। এই স্বল্প পুঁজি নিয়ে অবশ্য যথেষ্ট লড়াই করেছেন বোলাররা। নতুন বলে তাসকিন আহমেদের গতি আর সুইংয়ের পর মিডল ওভারে সাকিব-মেহদীর ঘূর্ণিতে কঠিন পরীক্ষায় দিতে হয়েছে লঙ্কান ব্যাটারদের। তবে তাদের ৫০ ওভার আটকে রাখার জন্য ১৬৪ রান যথেষ্ট ছিল না। শেষ পর্যন্ত ৫ উইকেটের জয় পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। এই ম্যাচ হারায় আসরে টিকে থাকার সমীকরণটা বাংলাদেশের জন্য বেশ কঠিন হয়ে গেল।

বৃহস্পতিবার পাল্লেকেল্লেতে টস জিতে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নেন সাকিব আল হাসান। আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৪২ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৬৪ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ। জবাবে ৩৯ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় শ্রীলঙ্কা।

বাংলাদেশের দেয়া ১৬৫ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে শুরুটা ভালো করতে পারেনি শ্রীলঙ্কান দুই ওপেনার। ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই শরীফুল ইসলামের বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে মুশফিকের হাতে গ্লাভসবন্দী হয়ে সাজঘরে ফিরেন দিমুথ করুণারত্নে। এরপরের ওভারেই আরেক ওপেনার পাথুম নিশাঙ্কার উইকেটটিও তুলে নেন তাসকিন আহমেদ। টাইগার স্পিডস্টারের বলে বোল্ড আউট হয়ে নিশাঙ্কা সাজঘরে ফিরলে লঙ্কানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় দুই উইকেট হারিয়ে ১৫ রান।

লঙ্কানদের হাল ধরতে তখন ক্রিজে ছিলেন কুশল মেন্ডিস এবং সাদিরা সামারাবিক্রমা। এই সাদিরার কাছেই শেষ পর্যন্ত নতি স্বীকার করতে হয়েছে টাইগার বোলারদের। ২১ বলে ৫ রান করে মেন্ডিস সাকিবের শিকার হয়ে ফিরে গেলেও সাদিরা একপ্রান্ত আগলে রানের চাকা ঘুরিয়েছেন। চারিথ আসালাঙ্কার সঙ্গে গড়েছেন ৭৮ রানের এক জুটি যাতে ভর করে ম্যাচে ঘুরে দাঁড়ায় লঙ্কানরা।

দলীয় ১২১ রানে শেখ মেহেদীর বলে সাদিরা স্ট্যাম্পিংয়ের ফাঁদে পড়ে আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন। আউট হওয়ার আগে তিনি করেছেন ৭৭ বলে ৫৪ রান। এরপরের ওভারেই ধনঞ্জায়া ডি সিলভাকেও ফেরান সাকিব। ফলে ম্যাচে ফেরার কিছুটা আশা জাগে টাইগারদের।

তবে শেষ পর্যন্ত টাইগারদের আর ম্যাচে ফেরা সম্ভব হয়নি। আসালাঙ্কার হার না মানা ৯২ বলে ৬২ রানের ইনিংসে শেষ পর্যন্ত ৩৯ ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় লঙ্কানরা। ফলে পাঁচ উইকেটের জয় দিয়েই এবারের এশিয়া কাপে নিজেদের যাত্রা শুরু করল শ্রীলঙ্কা।

এর আগে প্রথম ইনিংসে পাল্লেকেল্লেতে আজ টাইগারদের অধিনায়ক টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিলে ব্যাট হাতে ম্যাচ ওপেন করতে নামেন নাইম শেখ এবং তানজিদ তামিম। ইমার্জিং এশিয়া কাপে আলো ছড়ানো এই জুনিয়র তামিম আজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেক ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। তবে অভিষিক্ত এ ব্যাটার ফিরেছেন শূন্য রানেই।

ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলেই মহিশ থিকসানার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে আউট হন তিনি। ফলে দলীয় ৪ রানেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। এরপর আরেক ওপেনার নাইমও পারেননি বেশিক্ষণ টিকে থাকতে। দলীয় ২৫ রানের মাথায় ধনঞ্জায়া ডি সিলভার বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে সাজঘরে ফিরেন তিনি। আউট হওয়ার আগে করেছেন ২৩ বলে ৩ চারে ১৬ রান।

এদিকে দুই ওপেনারকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে পথ দেখাতে ক্রিজে থাকা শান্তর সঙ্গী হন অধিনায়ক সাকিব। কিন্তু পারেননি তিনিও। এগারতম ওভারে মাথিশা পাথিরানার করা বল ব্যাটের কোণায় লেগে চলে যায় উইকেটের পেছনে, আর দারুণভাবে লাফিয়ে পড়ে তা গ্লাভসবন্দী করেন উইকেটরক্ষক কুশল মেন্ডিস। ফলে মাত্র রানেই ৫ রানেই বিদায় নিতে হয় বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারকে।

এদিকে সাকিব ফেরার পর ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তাওহীদ হৃদয়। এ দুজনের ব্যাটেই ম্যাচে ফেরার স্বপন বুনতে শুরু করে টাইগাররা। বিপর্যয় কাটিয়ে জুটি বেঁধে দুজনে মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেন ৫৯ রান। তবে এ দুজনের জুটিতে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ তখনই আউট হন হৃদয়।

লঙ্কান অধিনায়ক দাশুন শানাকার বলে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে তিনি সাজঘরে ফিরলে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় চব্বিশ ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ৯৫ রান।

এরপর আর দাড়াতে পারেনি কেউই। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহিমও ১৩ রানেই ফেরার পর ৫ রান করে রাউন আউট হয়ে সাজঘরে ফিরেন মেহেদী হাসান মিরাজও।

এদিকে একপ্রান্তে টাইগার ব্যাটারদের যাওয়া-আসার মিছিল থাকলেও অপর প্রান্তে আগলে ধরে খেলছিলেন শান্ত। ব্যক্তিগত পঞ্চাশ পূরণ করার পর দলীয় সংগ্রহ বাড়ানোর পাশাপাশি ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছিলেন নিজের শতকের দিকেও। তবে এক সময় হার মানতে হয় তাকেও।

৪২তম ওভারে থিকসানার বলে বোল্ড হয়ে হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। তবে ১২২ বলে ৭ চারে করা তার ৮৯ রানের ইনিংসের কল্যাণেই লজ্জাজনক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পায় বাংলাদেশ।

এদিকে শান্ত আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে যোগ হয় আর মাত্র দুই রান। ফলে ৪২.৪ ওভারে মাত্র ১৬৪ রানেই থামে টাইগারদের ইনিংস। আর লঙ্কানদের হয়ে সর্বোচ্চ চারটি উইকেট নিয়েছেন পাথিরানা।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ