শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি : বগুড়া শাজাহানপুরে আশেকপুর ইউনিয়নের জোড়া এমদাদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আজমিয়ারা নামের প্রথম শ্রেণির এক ছাত্রী ক্লাসে পড়া দিতে না পারায় তাকে ৫০ বার কান ধরে ওঠবস ও চড়থাপ্পড় দেওয়ায়  শ্রেণিকক্ষেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ওই শিশু শিক্ষার্থী।  এ ঘটনায় অভিভাবক ও স্থানীয় জনতা প্রধান শিক্ষিকাকে অবরুদ্ধ করে রাখলে শিক্ষা কর্ম কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

বৃহঃবার ৩১ আগষ্ট শিশুটির মা রুনুফা আকতার জানান, ২৯ আগষ্ট এ  ঘটনার পর থেকে তিনি তার মেয়েকে শিশু কে নিয়ে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

আজমিয়ারা’র সহপাঠিরা  জানায়, প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন আখতার তাদের ইংরেজি বিষয়ের ক্লাস নেন।

এসময় আজমিয়ারাকে পড়া ধরেন। কিন্তু সে পড়া না পাওয়ায় প্রধান শিক্ষিকা তাকে ৫০ বার কান ধরে ওঠা বসা করতে বলেন সেই সাথে জোড়ে জোড়ে চড়থাপ্পড় দেন। এ সময় আজমিয়ারা জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। অবস্থা বেগতিক দেখে অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা আজমিয়ারা’র মাথায় পানি ঢালতে শুরু করে। এ ঘটনা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়লে ছাত্র ছাত্রীদের অভিভাবক ও স্থানীয়রা প্রধান শিক্ষিকাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্থানীয় ইউপি সদস্য জাহাঙ্গীর আলম এবং ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত ৫ জন সহকারি শিক্ষক জানিয়েছেন, শিক্ষার্থী নির্যাতনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়, এর আগেও অনেক শিক্ষার্থীকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করেছে প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন আখতার। এসব বিষয় নিয়ে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ দায়ের করেও কোন ফল পাননি। তারা আরও বলেন, প্রধান শিক্ষিকার  ভয়ে বেশ কয়েক জন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করেছে। অনেকে অন্য বিদ্যালয়ে বা মক্তব মাদরাসায় পড়ছে।

২য় শ্রেনীর ছাত্রী রীতু মনি জানায়, প্রধান শিক্ষিকা সবসময় চড় থাপ্পর সহ অসদাচরণ করে ও মা বাবা তুলে গালী দেয়। এ ভয়ে অনেকেই স্কুলে আসেনা।

এসব বিষয় জানতে প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন আকতার এর নিকট ফোন দিলে তিনি কোন কথা বলতে রাজী হননি।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার প্রতিবাদ করেছে অভিভাবকগণ। কিন্তু প্রধান শিক্ষকের আচরণের কোন পরিবর্তন হয়নি।

তারা আরও জানান, ২০১৭ সালের ২৯ অক্টোবর বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে তিনি একদিনও বিদ্যালয়ে সঠিক সময়ে আসেন নাই। সকাল সোয়া ৯টায় বিদ্যালয়ে উপস্থিত হওয়ার কথা থাকলেও তিনি আসেন সকাল ১১টা কিংবা সাড়ে ১১টার দিকে।

আশেকপুর ইউপি চেয়ারম্যান হযরত আলী ও বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষিকা নাজনীন আখতার বিদ্যালয়ের সভাপতি, অন্যান্য  শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার করেন। তাই শিক্ষার্থীদের পাঠদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে জরুরি ভিত্তিতে প্রধান শিক্ষিকাকে বদলী করা প্রয়োজন।

এসব বিষয়ে শাজাহানপুর উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল কাইয়ুম জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষিকাকে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে সার্বিক বিষয় জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে  এবং তার বদলীর বিষয়ে সুপারিশ করা কয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ