নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে তিস্তাপাড়ের মানুষ

বগুড়া নিউজ ২৪ ঃ না বৃষ্টিতে ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা অংশে বাঁধ ভেঙে গেছে। ভারত থেকে পাহাড়ি ঢল ধেয়ে আসছে বাংলাদেশে। ফলে উত্তরাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। উজানের ঢলে ফুলেফেঁপে উঠছে তিস্তার পেট। কোথাও পানি বাড়ছে আবার কোথাও কমছে, বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে তিস্তার পানি।

বুধবার (৪ অক্টোবর) মধ্যরাতে পানি বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

তিস্তাবেষ্টিত লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার শঙ্কার সঙ্গে বাড়ছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও। বন্যার আতঙ্কে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুঁটছেন তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।

এদিকে সিকিম পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সতর্কতা জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। একইসঙ্গে নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যেতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।

এদিকে নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে পাউবো পরিচালক (বোর্ড) ওবায়দুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম এবং গাইবান্ধার তিস্তা এলাকাগুলোতে কর্মরত ও কর্মচারীদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকা অপরিহার্য। সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে পাউবোর সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিলসহ দপ্তর বা কর্মস্থল ত্যাগ না করা নির্দেশ দেওয়া হলো।

পাউবোর আরেক আদেশে বলা হয়েছে, বন্যা মনিটরিং ও বন্যাকালীন জরুরি যোগাযোগের জন্য পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে একটি কন্ট্রোল রুম (০১৫৫২৩৫৩৪৩৩ ও ০১৭৮৭৬৯৪৭৮৮) নম্বর খোলা হয়েছে। দপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হানের দায়িত্বে কন্ট্রোল রুম ২৪ ঘণ্টা সচল থাকবে। মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যেকোনো জরুরি তথ্যের জন্য কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

লালমনিরহাটে মানুষজনকে নিরাপদ সড়তে চলছে মাইকিং করা হচ্ছে। স্বল্প সময় গবাধিপশু অতিপ্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে তিস্তার চারঞ্চলের বাসিন্দারা।

বন্যার পানি বাড়তে শুরু করেছে তিস্তারে ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়।

জেলার হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও লালমনিরহাট সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ও মাইকিং করে জনগণকে নিরাপদে সরে যেতে বলা হচ্ছে।

ডাউয়াবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মশিউর রহমান বলেন, বন্যার পূর্বাভাস পাওয়ার পর থেকেই প্রত্যন্ত চরে চরে গিয়ে মানুষকে সচেতন করা হচ্ছে, পানি বাড়ার আগেই তাদেরকে নিরাপদ স্থানে যাওয়ার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে।

লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ উল্লাহ বলেন, বন্যা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। ইতোমধ্যে তিস্তার পার্শ্ববর্তী মানুষকে সচেতন করার জন্য ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে মাইকিং করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে বলা হয়েছে।

এদিকে উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা নদীর পানি ২৬ সেন্টিমিটার বেড়েছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড ঢাকার পানি ভবনের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বরাত দিয়ে গাইবান্ধা পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাফিজুল হক জানান, ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতলে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, বুধবার সকাল ৯ টার তথ্য অনুযায়ী তিস্তা নদী কাউনিয়া পয়েন্টের পানি সমতল ২৮.১৫ মি. (বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচে), যা আগামীকাল ভোর নাগাদ বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারি, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তা নদী তীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।

ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদীর বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে এবং পরবর্তীতে সর্বোচ্চ পানি সমতলের (৫২.৮৪ মি) কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

বন্যার এই পূর্বাভাস পাওয়ার পর সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন তিস্তা নদী বেষ্টিত চর ও নিচু অঞ্চলের মানুষকে দ্রুত উঁচু স্থানে সরিয়ে যাওয়ার জন্য বুধবার বিকেল থেকে মাইকিং করা হচ্ছে।

এদিকে সন্ধ্যায় বন্যার পূর্বাভাস নিয়ে আগাম প্রস্তুতি ও বন্যার সময় করণীয়বিষয়ক এক জরুরি সভা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তণে অনুষ্ঠিত হয়। উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি এই সভার আয়োজন করে।

সভায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ওয়ালিফ মণ্ডল, উপজেলা প্রকৌশলী মো. শামসুল আরেফীন, তারাপুর, কাপাসিয়া, হরিপুর, চন্ডিপুর, বেলকা ও শ্রীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসহ উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানান, সম্ভাব্য বন্যার হাত থেকে তিস্তা নদী বেষ্টিত ৭টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের জনগোষ্টিকে সরিয়ে নিতে ২৮টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ