রাজধানীতে জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা

বগুড়া নিউজ ২৪ঃ দরজায় কড়া নাড়ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। পূজা শুরু হবে আগামী ২০ অক্টোবর শুক্রবার। বাকি আর মাত্র ৩ দিন। এরই মধ্যে রাজধানীর মার্কেটগুলোয় জমে উঠেছে পূজার কেনাকাটা। প্রতিবছরই দুর্গাপূজা ঘিরে শপিং মলগুলোতে থাকে বাড়তি চাপ। এবারও তার ব্যতিক্রম নয়। ব্র্যান্ড ও নন-ব্র্যান্ড আবহাওয়া বিবেচনায় নিয়ে এসেছে নিত্য-নতুন সব পোশাক।

ব্যবসায়ীরা জানান, দুর্গাপূজায় সাধারণত ছিমছাম পোশাকের কদর বেশি থাকে। শরতের মোহনীয় রূপের সঙ্গে মানানসই ধর্মীয় এবং ট্রেন্ডি পোশাক এখন হালফ্যাশনে জায়গা করে নিয়েছে। ধুতি, পায়জামা, পাঞ্জাবি, প্যান্ট, টি-শার্ট, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, থ্রিপিস, কুর্তি, জুয়েলারি ও শাখা রয়েছে কেনাকাটার পছন্দের তালিকায়। একইসঙ্গে ওয়েস্টার্ন পোশাকও বিক্রি হয়ে থাকে পূজাকে ঘিরে। দুর্গাপূজায় শাড়ির কদরও বেশি। সেজন্য দোকানিরা জামদানি, ঢাকাই বেনারসি, রাজশাহীর রেশমি শাড়ি, টাঙ্গাইলের তাঁতের শাড়ি, কাতান শাড়ি, পাবনা শাড়ি, সুতি শাড়ি, মণিপুরী শাড়ি এবং ঢাকাই জামদানির পর্যাপ্ত কালেকশনের পাশাপাশি বয়ন, নকশা ও আভিজাত্যের জন্য কলকাতা ও রাজস্থানি শাড়িও সংগ্রহ করেছেন।

অনেকে এরই মধ্যে কেনাকাটা সেরেছেন। অনেকে আসছেন নতুন করে কিনতে। কেউবা আসছেন টুকিটাকি কেনাকাটার জন্য। তবে শেষ সময়ে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে জুয়েলারি আইটেম, কসমেটিকস, জুতো ও সেন্ডেল। পোশাক কেনাকাটাও চোখে পড়ার মতো।

সোমবার রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি থেকে নীলক্ষেত পর্যন্ত নিউমার্কেট, গাউছিয়া মার্কেট, চন্দ্রিমা সুপার মার্কেট, নূর ম্যানশন মার্কেট, গ্লোব শপিং সেন্টার, ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেট, ঢাকা নিউ সুপার মার্কেট, নুরজাহান সুপার মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড এবং মৌচাক, মালিবাগ ও মগবাজার এলাকার বেশ কয়েকটি মার্কেট ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।

ধানমণ্ডি হকার্স মার্কেটের বিক্রয়কর্মী আসাদ বলেন, ‘শনিবার বিকাল থেকেই মার্কেটে ভিড় ছিল। তবে ক্রেতা ছিল কম। সবাই শুধু শাড়ি দেখেছেন, কেনাকাটা করেছেন কম ক্রেতা। রোববার থেকেই ক্রেতার বাড়তি চাপ আছে।’

নুরজাহান সুপার মার্কেটের জ্যেষ্ঠ ব্যবসায়ীরা জানান, এখানে সব ধরনের ক্রেতারা আসেন বিধায় অধিকাংশ দোকানেই ৮০০ টাকা থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ১০-১৫ হাজার টাকা দামের শাড়িও রয়েছে। অধিকাংশ ক্রেতাই কিছুটা কম দামের শাড়ি নেওয়ার জন্য বিভিন্ন দোকানে খোঁজ করছেন। তারাও ক্রেতাদের চাহিদা ও বাজেট অনুযায়ী শাড়ি দেখাচ্ছেন। এ বছরও বেচাকেনা বেশ ভালো।

রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে রয়েছে স্পেশাল ডিজাইনের পাঞ্জাবি, শার্ট, প্যান্ট, জামদানি শাড়ি, সিল্ক শাড়ি, সুতি শাড়ি এবং মসলিন শাড়ি আছে। উন্নত মানের সালোয়ার-কামিজ, রয়েছে মা ও মেয়ের একই ধরনের কম্বো পোশাক। এগুলো ১৮০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে রয়েছে। ১৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকার মধ্যে ছেলে ও বাবার একই রঙের পাঞ্জাবি রয়েছে। আবার নরমাল এসব পণ্য ১ হাজার টাকায়ও পাওয়া যাচ্ছে।

বয়েল কটনের শাড়ি ও পাঞ্জাবির কম্বো ফ্যামিলি (ছেলে-মেয়ে-মা-বাবা) রয়েছে। পূজা উপলক্ষে এসব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০০ টাকা থেকে ৬ হাজার টাকার মধ্যে। এছাড়া কটন ও মসলিন শাড়ি রয়েছে স্পেশাল রেটে। রয়েছে হাফ সিল্ক ফতুয়া, বাচ্চাদের ম্যাচিং সেট ও বড় বাচ্চাদের ম্যাচিং বিভিন্ন রঙের পোশাক।

পূজা উপলক্ষে সমরেশ পোশাক কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘অনেক কিছুই কেনাকাটা করেছি পরিবারের জন্য। আমারটা বাকি ছিল সেটা আজ সেরে নিয়েছি।’

এবার পূজায় পোশাক বিক্রি নিয়ে মৌচাক রোড সাইট অঞ্জনসের ম্যানেজার মো. ইয়াসিন বলেন, ‘আমরা এবার পূজায় আবহাওয়ার সঙ্গে ম্যাচিং করে নতুন সব পোশাক এনেছি। ক্রেতার চাহিদা ও সাধ্যের মধ্যে এসব পোশাক পাওয়া যাচ্ছে।’

মৌচাক মালিবাগ এলাকায় জুতা-সেন্ডেল ও জুয়েলারি আইটেম বিক্রি বেশি দেখা গেছে। পূজায় নতুন ধরনের ভ্যানিটি ব্যাগও রয়েছে। এসব এলাকার মার্কেটগুলোয় বিভিন্ন জুতা-সেন্ডেল পাওয়া যাচ্ছে ৫০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। কারুকাজ করা মেয়েদের জুতা পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ টাকায়। ভ্যানিটি ব্যাগ পাওয়া যাচ্ছে ৩৫০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে।

পুজোয় বিক্রি বেড়েছে জুয়েলারি আইটেমের। মৌচাক এলাকার মার্কেটগুলোতে আসা বেশিরভাগ নারীই হাত, কান, নাক এবং গলার ইমিটেশন জুয়েলারি কিনছেন। এসব মার্কেটে কানের দুল পাওয়া যাচ্ছে ৮০ টাকা থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে, নাক ফুল ও হাতের আংটি মিলছে ৫০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে, গলার হার ১০০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। রয়েছে স্পেশাল পূজা উপলক্ষে গহনা সেট। এসব গহনা সেট পাওয়া যাচ্ছে ৭৫০ টাকা থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে।

বিক্রেতা রহিম জানান, ইমিটেশন জুয়েলারির দাম কম, আবার দেখতেও সুন্দর। এ কারণে উৎসব-পার্বণে ইমিটেশন জুয়েলারি বেশ জনপ্রিয়। এদিকে, রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার চন্দ্রিমা সুপার মার্কেটের কাপড় ব্যবসায়ী আলী নূর জানান, ‘অনেকে দাম বেশির কথা বলছেন। কেউ বলছেন, অনলাইনে একই কাপড়ের দাম অনেক কম। অনলাইনে যারা ব্যবসা করেন তাদের তো দোকান ভাড়া, কর্মচারীর খরচ নেই। এখানেই আমরা বেকায়দায় পড়েছি। তবে বিক্রি খারাপ নয়।

এদিকে, ক্রেতারা বরাবরের মতোই কাপড়ের বাড়তি দাম নিয়ে অভিযোগের কথা জানালেন। সুষমা বিশ্বাস নামের এক ক্রেতা বলেন, ‘এদিকে শপিং করতে আসি কিছুটা কম দামে জিনিস পাওয়ার জন্য। কিন্তু এখানকার ব্যবসায়ীরা যে কোনো জিনিসের অতিরিক্ত দাম হাঁকছেন। পূজার আগে যেসব শাড়ি ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকায় বিক্রি হতো, সেগুলোর এখন দাম চাইছে ২৫০০ থেকে ২৮০০ টাকা। পরিবারের সবার জন্য কেনাকাটা করাটা এক প্রকার দুরূহ ব্যাপার হয়ে গেছে।’

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ