দিনাজপুর প্রতিনিধি: আবারও অস্থিরতা দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের বাজারে। একরাতের ব্যবধানে ভারতীয় পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে বেড়েছে ৮০-৯০ টাকা। অন্যদিকে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা কেজিতে।
অভ্যন্তরীণ সংকট ও মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে ভারত সরকার হঠাৎই বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওযায় এই অস্থিরতা দেখা দেয়। ফলে ভারত থেকে আমদানি বন্ধের ঘোষণায় হিলি স্থলবন্দরের মোকামে ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম।
ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফরেন ট্রেডের (ডিজিএফটি) মহাপরিচালক সন্তোষ কুমার সারাঙ্গী স্বাক্ষরিত আদেশে বলা হয়েছে গত বৃহস্পতিবারের আগে যেসব পেঁয়াজ রপ্তানিতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেসব পেঁয়াজ রপ্তানি করা যাবে। এ আদেশ আগামী ৫ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাংলাদেশে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ থাকবে বলে ওই আদেশে বলা হয়েছে।
এদিকে বন্দরের মোকাম ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল শুক্রবার বাংলা হিলি বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-৯০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছিল। কিন্তু ভারতের রপ্তানি বন্ধের ঘোষনায় এদিন সকাল থেকে ১৬০-১৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা দামে। এক রাতের ব্যবধানে প্রকারভেদে কেজিতে ১০০ টাকার ওপরে বেড়েছে।
বন্দরের বাংলাহিলি বাজারের কাচাপণ্য বিক্রেতা ময়নুল শেখ জানান, প্রতি মুহূর্তে পেঁয়াজের দাম বাড়ছে। গতকাল শুক্রবার ভারতীয় যে পেঁয়াজ ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে আজ তা ১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তাও আবার যত সামান্য পেঁয়াজ আছে। আজকের মধ্যে বিক্রি শেষ হয়ে যাবে। দেশি পেঁয়াজ সকালে ২২০ টাকায় বিক্রি করেছি। দুপুরের পর শেষ হয়ে গেছে। বাজারে কোনো ব্যবসায়ীর কাছে দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
স্থানীয় পৌর শহরের ক্রেতা সাবের আলী জানান, ভারতের কাণ্ড দেখে মনে হয় তারা সবকিছুতেই আমাদের নিয়ন্ত্রণ করছে। যখন যা মনে হচ্ছে তাই করছে। কখনও চাল বন্ধ করছে, আবার কখনও পেঁয়াজ বন্ধ করছে। সরকারের উচিত, অন্য দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখা। তাহলে আমরা কম আয়ের মানুষেরা কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারবো। ক্রেতারা দাম নিয়ে স্বস্তিতে থাকবে।
হিলি স্থলবন্দর আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশিদ জানান, ভারত সরকারের বেঁধে দেওয়া ৮০০ মার্কিন ডলারের রপ্তানি মূল্যে আমরা হিলি বন্দর দিয়ে দেশে পেঁয়াজ আমদানি করছি। কিন্তু এরই মধ্যে ভারত সরকার আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। তাদের এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে দেশের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবেন, তেমনই দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ারও আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের উচ্চপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে সমাধানের দাবি জানাচ্ছি। আগে দুই-তিন ডলার মূল্যে পেঁয়াজ রপ্তানি করা হলেও গত ২৮ অক্টোবর রপ্তানি মূল্য বাড়িয়ে ৮০০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ করা হয়।
তিনি আরও জানান, সরকারের বাজার পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করা দরকার। এখন থেকে বাজারে অভিযান চালানো হলে দাম বাড়ার আশঙ্কা থাকবে না। কারণ আমদানি বন্ধের ঘোষণায় এর মধ্যেই ভোক্তাদের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয়েছে।
এদিকে বন্দরের কয়েকজন আমদানিকারক জানান, আগের অনুমতি থাকায় আজ দুপুর থেকে ভারত থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে তিনটি ভারতীয় ট্রাকে প্রায় ৮০ মেট্রিক টন পেয়াজ আমদানি করা হয়েছে। কাল রোববার থেকে আমদানি বন্ধ হয়ে যাবে।