আন্দোলন করে রায় বদলানো যাবে না : প্রধান বিচারপতি

বগুড়া নিউজ ২৪: প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, রাজপথে আন্দোলন করে আদালতের রায় পরিবর্তন করা যাবে না।

সরকারি চাকরিতে (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর বুধবার এক মাসের জন্য স্থিতাবস্থা জারি করে আদেশ দেওয়ার সময় এ কথা বলে তিনি।

এ সময় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষেও ফিরে যেতে বলেন প্রধান বিচারপতি। যারা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সব সড়ক নিশ্চল হয়ে পড়েছে।

আদেশের সময় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “সকল প্রতিবাদী কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদেরকে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়ে নিজ নিজ কাজে অর্থাৎ পড়াশোনায় মনোনিবেশ করতে বলা হলো।”

তিনি বলেন, “দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয়, প্রক্টর ও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান এবং তাদের ছাত্রছাত্রীদেরকে স্ব স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরিয়ে নিয়ে শিক্ষার উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করবেন মর্মে এই আদালত মনে করে।”

স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদকারী ছাত্রছাত্রীরা চাইলে আইনজীবীর মাধ্যমে তাদের বক্তব্য অত্র আদালতের সামনে তুলে ধরতে পারেন উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আদালত মূল দরখাস্তটি নিষ্পত্তিকালে তাদের বক্তব্য বিবেচনায় নিবে।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, “স্ট্যাটাস কো মানে হলো স্থিতাবস্থা, সবাই আপনারা তা জানেন। অর্থাৎ এটা নিয়ে আর কোনও কথা হবে না। লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) না আসা পর্যন্ত যার যার কাজে ফিরে যান।”

আদেশের আগে প্রধান বিচারপতি বলেন, “আমরা তো এই সমাজের মানুষ। কিছু কথা বলতে হয়। সেটা হচ্ছে যে, হাইকোর্টে একটা রায় হয়ে গেছে। আমাদের যে সকল ছাত্র-ছাত্রীরা যে আন্দোলন করছে, তাদের মনে একটা বিবাদ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তারা বের করার পথ যেটা মনে করছে, তারা সেটাই করছে। তারা রাস্তায় নেমেছে। তারা যেটা করেছে তা সমর্থন করার মতো না। যাই হোক তারা আমাদেরই ছেলে মেয়ে।

“আমি প্রথম থেকে বলেছিলাম, রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন হয় না। এটা আজকে না। আমি আরও একটি মামলায় ট্রাইব্যুনালে থাকতে বলেছিলাম। রাস্তায় স্লোগান দিয়ে রায় পরিবর্তন করতে পারবেন না। এর জন্য সঠিক পদক্ষেপ নেন।”

তিনি বলেন, “রাস্তায় যারা আন্দোলন করছেন, তাদের কিছু কথা তো আছে। তাদের এই কথাগুলো শুনবে কে? আমরা তো মানুষ। টেলিভিশন যখন দেখি টকশোতে কত কথা কতভাবে বলে। মনে হয় সমস্ত জ্ঞান তাদেরই। আর আমরা যারা এখানে আছি আমাদের কোনও জ্ঞানই নেই। এত কথা বলে উস্কানি দেওয়ার তো কোনও মানেই হয় না। বিষয়টির একটি সমাধান দরকার।”

এখন হাইকোর্ট বিভাগ একভাবে সমাধান করেছেন- একথা উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, “সেটা সঠিক হয়েছে, কি সঠিক হয়নি- সেটা দেখার অধিকারটা কার? সেটা দেখার একমাত্র অধিকার সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের। আপিল বিভাগ ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব না। এই কথাটা এই বাচ্চাদের কেউ বলেন না কেন?”

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, “যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, যারা বড় বড় জায়গায় আছেন- তারা কেন বলেন না, বাবা এটা তো পথ না। তোমরা যাও কোর্টে। কোর্টে কারও না কারও মাধ্যমে যাও, কোর্ট সেটা দেখবে। আমাদের ক্ষমতা আছে, আমরা হাইকোর্টের রায়টি বাতিল করে দিতে পারি।

“সরকারকে ডিরেকশন দিতে পারি। ইউ ডু ইট, ডোন্ট ডু ইট- দুইটাই বলতে পারি। আবার বলতে পারি, হাইকোর্টের রায় ঠিক হয়নি। আবার বলতে পারি ঠিক হয়েছে। কোনটা বলব সেটা হাইকোর্টের রায় দেখে। রায়টি আমাদের সামনে না আসা পর্যন্ত বলতে পারছি না।”

প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই পর্যন্ত যা হয়েছে, এনাফ ইজ এনাফ। আমার মনে হয় রায়টি আমাদের সামনে আসুক, রায়টি আসলে আমরা প্রোপার মূল্যায়ন করব। তাই এই পর্যায়ে আমরা উভয়পক্ষের আইনজীবীদের শুনানি নিয়ে পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দিচ্ছি। আদেশটি আমরা বাংলা ও ইংরেজিতে মিলিয়ে দিচ্ছি।”

হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে করা আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শাহ মনজুরুল হক। শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন এবং রিট আবেদনকারীদের পক্ষে ছিলেন মুনসুরুল হক চৌধুরী।

অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও শাহ মনজুরুল হক আদালতের কাছে হাইকোর্টের রায় স্থগিত রাখার আবেদন জানান। রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী হাইকোর্টের রায় বহাল রাখার দাবি জানান।

Please follow and like us:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

পুরানো সংবাদ
সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০৩১